হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের একজিকিউটিভ কাউন্সিলর কোঞ্চক স্ট্যানজিন বলেছেন, চুসুলের কাছে এখন চিনের বাহিনীর দিকে তাক করে বসে আছে ভারতের ট্যাঙ্কবাহিনী। চুসুল থেকে কিছু দূরে দক্ষিণ প্যাঙ্গং হ্রদের কাছে কালা টপের উপর অস্ত্র নিয়ে বসে আসে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের জওয়ানরা। এই পাহাড়ি এলাকায় খাবার বা অন্যান্য রসদ মেলা এক কথায় অসম্ভব।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উর্দিটাই নেই শুধু। আসলে তাঁরাও ভারতেরই সেনা। দেশসেবার ব্রত নিয়ে বিপদকে তুচ্ছ করেছেন। প্রাণের তোয়াক্কা নেই কারও। তরুণ থেকে বৃদ্ধ, সন্ন্যাসী থেকে মহিলা, চুসুল গ্রামের প্রতিজনই দেশের জওয়ানদের সেবা করে চলেছে সকাল থেকে রাত। নিঃস্বার্থ ভাবে,
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং রেঞ্জের কালা পাহাড়, হেলমেট, ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ নম্বর পাহাড়ি খাঁজ এখন স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের নিয়ন্ত্রণে।
চুসুল, মলডো, থাকুং এলাকায় ভারতীয় সেনা জওয়ানরা টহল দিচ্ছেন। এইসব পাহাড়ি এলাকা যেমন দুর্গম তেমনি এখানে প্রতি মুহূর্তে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। খাবার, জলের সমস্যা তুচ্ছ করেই অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারায় রয়েছেন ভারতীয় সেনা জওয়ানরা। তাঁদের মুখে খাবার তুলে দিতেই পাহাড় বেয়ে উঠছেন গ্রামবাসীরা।
চুসুল গ্রামের প্রায় ঘর থেকেই দু’বেলা খাবার, জল পৌঁছে যাচ্ছে জওয়ানদের কাছে। পরম মমতায় পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরের মা, বোনেরাও লাদাখের অটোনমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের একজিকিউটিভ কাউন্সিলর কোঞ্চক স্ট্যানজিন বলেছেন, চুসুলের কাছে এখন চিনের বাহিনীর দিকে তাক করে বসে আছে ভারতের ট্যাঙ্কবাহিনী।
চুসুল থেকে কিছু দূরে দক্ষিণ প্যাঙ্গং হ্রদের কাছে কালা টপের উপর অস্ত্র নিয়ে বসে আসে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের জওয়ানরা। এই পাহাড়ি এলাকায় খাবার বা অন্যান্য রসদ মেলা এক কথায় অসম্ভব। আর যেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে খাবার বয়ে নিয়ে গিয়ে মজুত রাখা সম্ভব নয়। কারণ কালা পাহাড়ের নীচেই নিজেদের যুদ্ধট্যাঙ্ক নিয়ে এগোচ্ছে লাল ফৌজ। প্রতি মুহূর্তের সতর্কতা দরকার। এমন সময় নাওয়া, খাওয়া ভুলেই ভারতের জওয়ানরা সীমান্ত আগলে বসে আছেন। দেশের সুরক্ষার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে সেই বীর জওয়ানদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
কোঞ্চক বলছেন, প্রতিদিন সকালে চুসুল, মেরেক গ্রাম থেকে তরুণ, বৃদ্ধ, মহিলারা খাবার ঝুলিতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। শুধু খাবার নয় অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসও থাকে তাঁদের ঝোলায়। কালা পাহাড় বেয়ে উঠে পড়েন তরুণরা। খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে ফের নিজেদের গ্রামে ফিরে যান। কখনও বয়স্ক মহিলাদেরও পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উঠতে দেখা যায়। পেট ভরে সেনাদের খাবার খাইয়ে তবেই ফেরেন তাঁরা।
চুসুল গ্রামেই নিজের ছোট্ট ঘর রয়েছে সেরিং স্টোবডানের। বলেছেন, গ্রামের তরুণ-তরুণী থেকে মহিলা, প্রাক্তন সেনা কর্মীরা এই কাজ করে চলেছে দিবারাত্র। চুসুল ও মেরেক গ্রামে অন্তত ৬০ জনের একটি দল তৈরি হয়েছে যাঁরা পালা করে জওয়ানদের খাবার, জল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছেন।
চুসুল গ্রামে অন্তত ১৭০ জন লোকের বাস। স্প্যানগুর লেক, হেলমেট ও কালা পাহাড়ি এলাকা অনেক বেশি নির্জন। এখানে বসতি তৈরির জায়গা নেই। দুর্গম পাহাড়ে প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু সেসব তুচ্ছ করেই গ্রামবাসীরা কালা পাহাড়ে পৌঁছে যাচ্ছেন। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, খুবই সতর্কভাবে সেনাদের কাছে আসছেন গ্রামবাসীরা। চুসুলের ঠিক বিপরীতেই ভারতীয় সীমার ওপারে চিনের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট। তারাও যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজিয়ে রেখেছে ভারতীয় বাহিনীকে নিশানা করে। তাই প্রতি মুহূর্তেই সতর্ক পা ফেলতে হচ্ছে সকলকেই।
সেনা সূত্র জানাচ্ছে, কালা টপের দখল নিতে না পেরে চিনের বাহিনী এখন পাহাড়ি পাদদেশগুলোতে নিজেদের যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজাচ্ছে। মলডো থেকে হেভি ওয়েট ট্যাঙ্ক, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থাকুং-এর দিকে এগোতে দেখা গেছে তাদের। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চিন ও ভারত দুই দেশের বাহিনীই টহল দেয়। গত শনিবার চুমার এলাকা দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টা করেছিল লাল ফৌজ।
তাদের লক্ষ্য ছিল কালা টপ ও হেলমেটের দখল নিয়ে নেওয়া। চেপুজি ক্যাম্প থেকে কয়েকটি আর্মড ভেহিকলকে বের হতে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। চিনের চেষ্টা রুখে দেওয়া হয়। এরপরেই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। নিশানা স্থির করে বসে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। এইসব দেখেই ফের নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যায় চিনের বাহিনী। ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, এই স্প্যানগুর গ্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই রেঞ্জের মুকপারি, মগর হিল, চুসুল থেকে থাকুং পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই পাহাড়ি উপত্যকায় এখন নিজেদের সামরিক বহর বাড়াচ্ছে চিন।