স্ত্রীর মৃ’ত্যুশোকে আস্ত পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের গয়ার দশরথ মাঝি নামের এক ব্যক্তি। সেই কাহিনি নিয়ে তৈরি সিনেমা মাঝি: দ্য মাউন্টেন ম্যান দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। সেই একই এলাকার আরেক ব্যক্তি একাই তিন কিলোমিটার লম্বা খাল কেটেছেন। শুধু নিজের জন্য নয়, গ্রামের সবার কৃষিকাজে পানির জোগান দিতেই তিনি এ কাজ করেছেন। এ কাজে তাঁর সময় লেগেছে ৩০ বছর।
এনডিটিভি গতকাল রোববার এক খবরে জানায়, ওই বৃদ্ধের নাম লাঙ্গি ভূঁইয়া। তিনি বিহার রাজ্যের গয়ার লাহথুয়ার কোথিলাওয়া গ্রামের বাসিন্দা। এই গ্রামটির চারপাশ ঘিরে ঘন জঙ্গল আর পাহাড়–পর্বত। গয়া জেলা সদর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। গ্রামটি মাওবাদীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত। কোথিলাওয়া গ্রামের বাসিন্দাদের জীবিকা বলতে কৃষিকাজ আর গবাদিপশু লালন–পালন। সেখানে বর্ষার মৌসুমে পর্বতমালা থেকে পানি গড়িয়ে নদীতে যায়। নদী থেকে সেই পানি ব্যবহার করা খুবই কষ্টসাধ্য। সেই বিষয়টি উপলব্ধি করেই পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টিজল গ্রামে আনতে খাল কাটা শুরু করেন লাঙ্গি।
লাঙ্গি ভূঁইয়া ৩০ বছর ধরে খালটি কাটলেও তাঁর এ কাজে কেউ সাহায্যের হাত বাড়াননি। তাঁর এই বিরল সংগ্রামের কথা জানাজানি হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব তাঁর কঠোর সংগ্রামের কাহিনিতে। লাঙ্গি ভূঁইয়া বলেন, ‘খালটি কাটতে আমার ৩০ বছর লেগেছে। এই খালের মাধ্যমে গ্রামের একটি পুকুরে পানি আনা হয়েছে। ৩০ বছর ধরে পাশের জঙ্গলে গবাদিপশু চরানোর পাশাপাশি খালটি খনন করি। এই কাজে আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। গ্রামবাসী জীবিকার জন্য শহরে যায়। কিন্তু আমি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
খালটি কাটতে আমার ৩০ বছর লেগেছে। এই খালের মাধ্যমে গ্রামের একটি পুকুরে পানি আনা হয়েছে। ৩০ বছর ধরে পাশের জঙ্গলে গবাদিপশু চরানোর পাশাপাশি খালটি খনন করি। এই কাজে আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। গ্রামবাসী জীবিকার জন্য শহরে যায়। কিন্তু আমি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
লাঙ্গি ভূঁইয়া, বিহার রাজ্যের গয়ার লাহথুয়ার কোথিলাওয়া গ্রামের বাসিন্দা
স্থানীয় বাসিন্দা পাতি মাঝি বলেন, ৩০ বছর ধরে তিনি (লাঙ্গি) একাই খালটি কেটেছেন। এটা পশুপালন ও সেচকাজে খুব কাজে আসবে। গয়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক রাম বিলাস সিং বলেছেন, প্রচুর লোক এই খাল থেকে সুবিধা পাবেন। তাঁর (লাঙ্গি) গৌরবময় ওই কাজের কথা এখন সবার মুখে মুখে। তিনি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠছেন।