সেপ্টেম্বরের সাপ্তাহিক লকডাউনের আগে ফের বাড়লো ডিমের দাম। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদা পাইকারি বাজারে মৌসুমের রেকর্ড দামে বিক্রি হল ডিম। অগাস্ট মাসের শেষদিকে ডিমের দাম বাড়লেও সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কিছুটা কমে ডিমের দাম। চলতি সপ্তাহে ফের বাড়ল ডিমের দাম।
শিয়ালদার পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার একেবারে আকাশছোঁয়া ডিমের দাম। পাইকারি বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম সাড়ে ৫ টাকা। শিয়ালদা ডিম পট্টিতে বৃহস্পতিবার এক কার্টুন ডিমের দাম ১১৩০ টাকা। এক কার্টুন বা একটি বক্সে সাতটি ট্রে থাকে। প্রতিটি ট্রেতে ৩০টি করে ডিম থাকে। একটি বক্স বা কার্টুনে ২১০টি ডিম থাকে। আর একটি ট্রেতে থাকে ৩০ টি করে ডিম। ১২০ থেকে ক্রমশ বেড়ে ১ ট্রে ডিমের দাম এখন ১৭০ /১৭৫ এ গিয়ে ঠেকেছে। পাইকারি বাজারে যখন এই হাল তখন খুচরা বাজারে ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডিম। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে ৬ টাকা ছাড়িয়ে যাবে খুচরো ডিমের বাজার।
বেহালার গৃহবধূ অঞ্জনা দফাদার বলেন, সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে রাতের ডিনার। ডিম ছাড়া চলা যায় না। হু হু করে ডিমের দাম বাড়লে প্রতিদিনের খরচ বাজেট ছাড়িয়ে যাবে।
আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক আগস্ট মাসের শেষ থেকে কীভাবে দিনের পর দিন বাড়ল ডিমের দাম। শিয়ালদা পাইকারি বাজার এর ছবিটা একবার দেখে নিন এক নজরে।
অগাস্ট মাসের ৩১ তারিখ থেকে ডিমের দামের তালিকা (প্রতি কার্টুন ডিমের দাম)–
৩১ অগাস্ট/১০৩০/৪৮৩
১লা সেপ্টেম্বর/১০৩০/৪৮৩
২ রা সেপ্টেম্বর/১০৩০/৪৮৩
৩রা সেপ্টেম্বর/১০৩০/৪৮৩
৪ ঠা সেপ্টেম্বর/৯৮০/৪৬০
৫ ই সেপ্টেম্বর/৯৮০/৪৬০
৬ সেপ্টেম্বর/৯৬০/৪৫০
৭ সেপ্টেম্বর/৯৬০/৪৫০
৮ সেপ্টেম্বর/১০৩০/৪৮৪
৯ সেপ্টেম্বর/১১০০/৫১৭
১০ সেপ্টেম্বর/১১৩০/৫৩০
ইতিমধ্যে খুচরা বাজারে সাড়ে ৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬ টাকা হয়েছে প্রতি ডিমের দাম। খুচরা বিক্রেতা যারা বৃহস্পতিবার শিয়ালদা ডিম পট্টিতে এসেছেন তারা বলছেন লাভ এমনিতেই কমে গেছে আরও কমলে লাভাংশ। ৬ টাকার বেশি দামে বিক্রি করলে কেউ কিনবে না। তাই অল্প লাভেই ডিমের ব্যবসা করতে হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি ডিমের প্রয়োজন। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উৎপাদনক্ষমতা ৮০ লক্ষ। আমফানে পর সেই উৎপাদন আরও কমেছে। তাই ডিমের দাম এর জন্য পশ্চিমবঙ্গকে অন্ধ্রপ্রদেশ তেলেঙ্গানা উপর নির্ভর করতে হয়। ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই আগামী দিনে ডিমের দাম কমার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না শিয়ালদা ডিম পট্টির ব্যবসায়ীরা।
পোল্ট্রি ব্যবসায়ী সমিতির কর্ণধার মদনমোহন মাইতি বলেন, সারা ভারতবর্ষের নিরিখে বর্তমান অবস্থায় ৫ টাকার ওপরে পাইকারি দাম থাকলেই তা পোল্ট্রি চাষের পক্ষে মঙ্গল জনক। হামফ্রন্ট লকডাউনে জেরবার পোল্ট্রি ব্যবসা। আনলক পর্যায়ে দোকান রেস্তোরাঁ খুলতেই ডিমের বাজারে লাভের মুখ দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
দ্য ক্যালকাটা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজল দত্ত বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে লভাংশ কমছে। পুজোর আগে ডিমের দাম কমার কোনো আসা কাজল বাবু দেখছেন না। বরং তিনি আশঙ্কার সুরে বলেন,সারা দেশের যা পরিস্থিতি অন্ধ্রপ্রদেশ তেলেঙ্গানা নিরিখে আগামী দিনে আরও দাম বাড়বে ডিমের। ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এর প্রভাব পড়ছে ডিমের বাজারে। বেলেঘাটার খুচরো ডিম ব্যবসায়ী আশিস মণ্ডল। তিনি বলেন সাড়ে পাঁচ টাকা পর্যন্ত ক্রেতারা ঠিকঠাক ডিম কিনছিলেন। ৬ টাকায় পৌছতেই ক্রেতারা কম ডিম কিনছেন। অনেকে আবার ডিমের সাইজ নিয়ে প্রশ্ন করছেন। এত দামি ডিম কিনে বিক্রি করা কষ্টকর হচ্ছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে।