রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা প্রতারণাকাণ্ডে এক মহিলা সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায় ও পূর্ণিমা দে নামে দু’জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রে জড়িত বাকিদের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: ‘‘ভৈরববাবু বলছেন? খুব প্রয়োজনে ফোন করছি।যদি একটু দেখা করতেন খুব ভালো হত।’’
ফোনের ওপার থেকে উত্তর আসে, ‘‘আমি তো এখন বোলপুরে রয়েছি। আপনি ফোনে বলতে পারেন কী প্রয়োজন।’’
এরপরেই খুব বিনয়ের সঙ্গে অচেনা গলায় ভৈরববাবুকে বলা হয়, ‘‘আমি গুসকরায় থাকি। শুনেছি রেলের চাকরির বিষয়ে আপনার যোগাযোগ রয়েছে। আমার ভাইপোর জন্য বলছিলাম। টাকা পয়সা যা লাগে দেব। কোনও অসুবিধা হবে না। বলুন কোথায় দেখা হবে?’’
ব্যাস এতেই কেল্লাফতে।
উত্তর আসে ‘‘ঠিক আছে। আমি সন্ধ্যার মধ্যে গুসকরা যাচ্ছি। আপনি বাসস্ট্যাণ্ডের কাছে চায়ের দোকানে দেখা করবেন।’’
যথাসময়ে পার্টি ধরতে হাজির হয়ে যায় ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায়। চায়ের দোকানে প্রথমে এক কাপ চাও পান। তারপরেই ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামার কলার চেপে ধরে গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি দেবাশিস নাগ বলেন, ‘‘চল গাড়িতে ওঠ। বাকি কথা শুনব থানায় বসে চা খেতে খেতে।’’
রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা কাণ্ডে ধৃত পাঁচজনের মধ্যে মূল চক্রী ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরতে এভাবেই ফাঁদ ফেতেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি দেবাশিস নাগ। বোলপুর থেকে টোপ দিয়ে ডেকে না আনলে তাকে ধরতে আরও কিছুদিন চলে যেত বলেই মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা।
রেলে চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা প্রতারণাকাণ্ডে এক মহিলা সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ভৈরব বন্দ্যোপাধ্যায় ও পূর্ণিমা দে নামে দু’জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রে জড়িত বাকিদের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
অঙ্কনশিল্পী হিসেবে খ্যাতি গুসকরা শহরের বাসিন্দা ভৈরবের। নিজের দোকান রয়েছে। কম্পিউটারের কাজ করেন। তারপরেও প্রায় চার বছর ধরে এই প্রতারণার ব্যবসা ফেঁদেছিল। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও এক মেয়ে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুলিশ।
ভৈরবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই সোমবার রাতে বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে পূর্ণিমা দে, গোবিন্দ দে, রতন রায় ও মতিলাল কোনারকে। চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতানোর কথা ধৃতরা কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবি। টাকা হাতানোর পর চাকরিপ্রার্থীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাঁদের শিয়ালদহ, ফেয়ারলি প্লেস ও লিলুয়ায় নিয়ে যেত প্রতারকরা, এমনটাও জানতে পেরেছে পুলিশ। তাই চক্রের সঙ্গে রেলের কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।