অঞ্জনা বসু আবারও ফিরেছেন শুটিং ফ্লোরে। কিন্তু মাঝে একটি বছর প্রায় হঠাৎই উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরপর দুইবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন অঞ্জনা। ফলে প্রভূত প্রভাব পড়েছিল ফুসফুস ও কিডনির উপর।
বর্তমানে শরীরে বাসা বেঁধেছে ডায়াবেটিস। করোনামুক্ত হলেও অঞ্জনার জরায়ুতে ধরা পড়েছিল বিরাট আকারের একটি টিউমার। পরিবারের সদস্যরা প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার সফল হলেও দীর্ঘ এক বছর বিছানায় শয্যাশায়ী হয়েছিলেন অঞ্জনা।
সেই দিনগুলির কথা বলতে গিয়ে আজও চোখে জল এসে যায় তাঁর। অঞ্জনা জানালেন, অস্ত্রোপচারের পর শরীরে ছিল বীভৎস যন্ত্রণা। পাশ ফিরতে পারতেন না তিনি। তাঁর নার্স সহ প্রায় তিন-চার জন মিলে অঞ্জনাকে পাশ ফিরিয়ে দিতেন।
ছয় খানা বালিশের সাহায্য নিয়ে অঞ্জনাকে আট-নয় মিনিট লাগত। কিন্তু বেশিক্ষণ একভাবে থাকতে পারতেন না অঞ্জনা। যন্ত্রণা হত। ফলে সোজা করে শুইয়ে দিতে বলতেন। চোখে জল চলে এলেও তা কারও কাছে প্রকাশ করতেন না অঞ্জনা।
চিৎকার করতেন না। কারণ কাউকে ব্যস্ত করে তুলতে চাননি তিনি। অঞ্জনার হাঁটা-চলাও একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় অঞ্জনার প্রথম প্রায়োরিটি ছিল বেঁচে থাকা।
গত কুড়ি বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে বড় পর্দা ও ছোট পর্দা মিলিয়ে যথেষ্ট কাজ করেছেন অঞ্জনা। জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ের সময় তিনি ভাবেননি আবারও শুটিং করতে পারবেন।
কারণ তখন ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছিলেন না অঞ্জনা। তাঁর মনে হয়েছিল, সহকর্মীদের কাজ দেখবেন টিভির সামনে বসে। নিজের পুরানো কাজগুলি দেখবেন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে।
কিন্তু সবকিছুর আগে তিনি বেঁচে থাকতে চান তাঁর পরিবারের জন্য, ছেলের জন্য। পটনা থেকে একসময় কলকাতায় এসেছিলেন মডেলিং করতে। কিন্তু ‘মুখোমুখি’ নাটকের দলে কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-র সাথে কাজ করতে গিয়ে অঞ্জনা উপলব্ধি করেছিলেন, অভিনয়ই তাঁর জগৎ।
আড়াই বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অভিনয়ে ডাকতে পারেননি প্রযোজক-পরিচালকরা। টিআরপি ভালো হওয়া সত্ত্বেও তিন দিনের নোটিসে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ধারাবাহিক। তবু মাথা নোয়াননি অঞ্জনা।
আত্মসম্মানের সাথে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। একই ভাবে আবারও আত্মসম্মানকে পুঁজি করেই জীবন যুদ্ধে জিতে শুটিং ফ্লোরে ফিরেছেন অঞ্জনা। লড়াই এখনও জারি রয়েছে।