মা খুব বাজে বাজে পিক পাঠায়

খুব লজ্জা আর ক’ষ্ট নিয়ে আজ লিখছি। আমা’র বয়স ১৯। আমি স্নাতক ১ম ইয়ারে পড়ছি। আমা’র ছোট ১টা ভাই আছে সে ৭ম শ্রেণীতে পড়ে। আমি আমা’র মা-কে অনেক ভালোবাসি। আমা’র মা আমা’র জন্য উনার লাইফটাই বলতে গেলে বিসর্জন দিয়েছেন।

মা’র যখন ১৫ বছর তখন উনার হুট করেই বিয়ে হয়ে যায় উনার থেকে ১৬ বছর এর বড় ১টা লোকের(আমা’র বাবা) সাথে। উনি স্কুল থেকে এসে শুনে উনার বিয়ে। খুব সাদামাটা ভাবেই উনার বিয়ে হয়। মা বাবাকে দেখেই বাসর রাতে। দেখে উনি আরও হতাশ হয়ে পড়ে। কারণ বাবা দেখতে মোটেই সুন্দর না।

অনেক কালো আর খাটো ছিল। আর সবথেকে বড় কথা হল বাবা ছিল বেকার। অ’পরদিকে মা খুব সুন্দর। খুবই সুন্দর। মা এখনও অনেক সুন্দর। মা’র ক’ষ্ট আরও বেড়ে যায় আমি আমা’র বাবার মত হয়েছি দেখে। হুট করে কেউ দেখলে বিলিভ করতে চায় না আমি আমা’র মায়ের মে’য়ে। কিন্তু মা আমাকে অনেক ভালোবাসে।

মায়ের বিয়েতে কেউ রাজি ছিল না। কিন্তু গ্রামের বিয়ে ,মুরব্বিরা মিলেই বিয়ে দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আমা’র নানারা মাকে বাবার ফ্যামিলি থেকে নিয়ে ফেলতে চায়। মানে ডিভোর্সের কথা হয়।

কিন্তু তখন আমি পেটে চলে আসি যার জন্যে তাদের আর ডিভোর্স হয়নি। আমা’র মা আজ পর্যন্ত আমা’র বাবাকে মেনে নেয়নি মন থেকে। কিন্তু বাবা মাকে অনেক ভালোবাসে। আমাদেরকে কোন দিক দিয়ে অ’সুখী রাখে নি।

আমি কখনো দেখিনি আমা’র বাবা আর মাকে একসাথে বসে আড্ডা দিতে। তারা প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলে না। মা বাবার জন্য সব করে কিন্তু তার কাছে যায় না। এমনকি তারা রাতেও একসাথে থাকে না। আমা’র নানা আর দাদার ফ্যামিলিতে কেউ জানে না তাদের স’ম্পর্ক যে এত খা’রাপ।

আম’রা ভাই-বোন কখনো মা-বাবার সাথে বাইরে একসাথে ঘুরতে যাইনি। রিলেটিভ এর বাসায় গেছি কিন্তু অন্য কোথাও ন। বাবা দুপুরে বাইরে খায়। কিন্তু রাতে বাসায়।

রাতে বাসায় থাকা সত্ত্বেও এক সাথে খাওয়া হয় না। আমি মে’য়ে হয়েও সব লজ্জা ভুলে চেয়েছি বাবা আর মাকে একত্রে রাখার। কিন্তু মা রাজি হয়নি। খুব খা’রাপ লাগে যখন অন্য কারো মা বাবাকে দেখি।

তারপরেও আমা’র মা আমা’র জন্য একজন আদর্শ ছিল। মা’র সাথে আমা’র স’ম্পর্ক বেশি ভালো। কিন্তু ইদানিং দেখি মা কাকে যেন তার খুব বাজে বাজে পিক পাঠায় ভাইবারে।

কী’ রকম পিক তা আমি বলতে পারছিনা। মা’র কাছেও আসে বাজে বাজে পিক। আমি এগুলা দেখার পর মাকে আর ভালোবাসতে পারছিনা। উনাকে দেখলেই আমা’র ঘৃ’ণা করে। উনি কী’ভাবে পারে নিজের এত বাজে পিক পাঠাতে? আমি জানি না কে সে?

আমি বুঝতে পারছিনা উনি কেন আমা’র বাবাকে এভাবে ঠকাচ্ছে। আমি এসব নিয়ে খুব ডিস্টার্ব ফিল করছি। লেখাপড়ায় মনযোগ দিতে পারছি না। আর মাকে দেখলেই গা জ্বালা করে।

আমি বুঝতে পারছি না কী’ভাবে সিচুয়েশন থেকে বের হব? আমি কি মাকে ডাইরেক্ট এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব?” দেশের অন্যতম একটি অনলাইনের বরাত দিয়ে খবরটি প্রকাশ করা হচ্ছে।

পরাম’র্শ:

প্রথমত বলি, তোমা’র সমস্যাটা আমি বুঝতে পারছি আপু। খুবই ভালো’ভাবে বুঝতে পারছি। আমি আমা’র খুব কাছের একজন বান্ধবীকে এই সমস্যার মাঝ দিয়ে যেতে দেখেছি।

তাই তোমা’র মানসিক অবস্থাটা আন্দাজ করতে পারছি। তোমা’র তোমা’র ভাগ্য ভালো যে মা তোমাকে খুবই ভালোবাসেন, তোমা’র জন্য নিজের জীবন স্যাক্রিফাইস করেছেন। আমা’র বান্ধবীর মা ওকে ভীষণ ঘৃ’ণা করতো।

তুমি ভেবো না যে আমি তোমা’র মায়ের সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি যা করছেন সেটা নিঃস’ন্দেহে পর’কী’য়া এবং ভীষণ খা’রাপ। তবে এটার পেছনে সম্পূর্ণ দায় তাঁর একার না, আরও কিছু কারণ আছে অন্তরালে। তাই তুমি কী’ করবে সেটা নির্ধারণ করার আগে সেগুলো নিয়েও ভেবে দেখতে হবে।

এমন কিছুই করা যাবে না যাতে সংসারটা ভেঙে যায়। তুমি আর তোমা’র ভাই, দুজনের জীবনই তাহলে এলোমেলো হয়ে যাবে। সাথে তোমা’র বাবারও। মে’য়ে হয়ে নিশ্চয়ই তুমি চাও না সংসারটা ভেঙে যাক?

তাই পদক্ষেপ নিতে হবে খুব সাবধানে। তোমাকে একই সাথে একজন তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখতে হবে এবং একজন দায়িত্বশীল কন্যার মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তুমি অবস্থাটা খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছ। এতে স্পষ্টই বুঝতে পারছি যে বাবাকে কখনোই মা ভালোবাসেন নি। কেবল তোমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করে গিয়েছেন।

তাতে যা হয়েছে, তাঁর বুকের ভেতরে আস্তে আস্তে একটা বড় শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। বাবাকে তিনি কখনোই নিজের যোগ্য মনে করেন নি, পরিস্থিতির চাপে বাবার সাথে বিয়ে হয়েছে বলে মা সারা জীবন নিজের ক’ষ্টের জন্য বাবাকেই দায়ী করেছেন। ভেবেছেন যে অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে তিনি আরও অনেক ভালো থাকতে পারতেন।

তোম’রা যখন ছোট ছিলে, মা তোমাদেরকে নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন। এখন তোম’রা বড় হয়েছ, মা অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছেন। জীবনে ভালোবাসার অভাব পূরণ করতে গিয়েই মা বিপথে চলে গিয়েছেন।

আজকাল ফেসবুক বা ভাইবারের কল্যাণে স’ম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। অনেকেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন, নিজের ক’ষ্ট কম করতে গিয়ে ভুল পথে চলে মা’ও গিয়েছেন।

কিন্তু তুমি রাগ বা ঘেন্না করে মাকে এই পথে থেকে ফেরত আনতে পারবে না। সেটা করার জন্য মা ও বাবা দুজনের প্রতিই তোমা’র সহানুভূতিশীল হতে হবে।

বড় হলে মায়ের বান্ধবী হয়। তুমি একজন বান্ধবীর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে শুরু করলেই মায়ের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারবে। নিজের জীবনের অ’পূর্ণতা পূরণ করতে গিয়ে মা এমন একটা খেলায় মেতে উঠেছেন যা তাঁকে ক’ষ্ট ছাড়া কিছুই দেবে না। এখানে দুটি ব্যাপার লক্ষণীয়। এক, কেউ রাজি না থাকা সত্ত্বেও বাবার সাথে মাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল।

এতই অ’পছন্দ যে তোমা’র নানাবাড়ি ডিভোর্স চেয়েছিল। এমন বিয়ে হবার পেছনে অবশ্যই কোন না কোন কারণ থাকে। নিশ্চয়ই এমন একটা কিছু হয়েছিল যার জন্য এই জো’র পূর্বক বিয়ে। সেই কারণটি কী’?

দ্বিতীয়ত, তোমা’র সাথে তোমা’র ভাইয়ের বয়সের পার্থক্য অনেক। সহ’জেই অনুমেয় যে ততদিন পর্যন্ত তাঁরা একসাথেই থাকতেন, নাহলে ভাইয়ের জন্ম হতো না। এখন যেহেতু আলাদা থাকছেন, নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। সেই কারণটি কী’? এগুলো জানার চেষ্টা করবে। তাহলে সমাধানে সাহায্য হবে।

মায়ের ক’ষ্ট বা হতাশার ব্যাপারটি আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু মানুষের চেহারাই কি সব? বাবা যেহেতু মাকে অনেক ভালোবাসেন, জীবনে কোন অ’পূর্ণতা রাখেন নাই, তোমাদেরকেও ভালোবাসেন- স্বামী বা পিতা হিসাবে তাঁর তো কোন ত্রুটি আমি দেখতে পারছি না। তাছাড়া একটা জিনিস ভাবো, মা যেন সারাটা জীবন ভালোবাসার অনুভব করেছেন, বাবাও তো ভালোবাসা পান নি।

বরং বাবার ভাগ্য মায়ের চাইতে খা’রাপ। মায়ে বাবা ভালবেসেছেন, কিন্তু মা বাবাকে সেই ভালোবাসা দিতে পারেন নি। ঠিক এই কথাটিই তোমা’র মায়ের মন মস্তিষ্কে সেটল করতে হবে।

তিনি এক তরফা ভাবছেন, কেবল নিজের দিক চিন্তা করছেন। এখন তাঁকে আরেকজনের দিকটাও ভাবতে হবে। একই সাথে যে পর’কী’য়ায় তিনি জড়িয়েছেন, সেটার যে কোন ভবিষ্যৎ নেই, সেটাও মাকে অনুধাবন করাতে হবে।

যা করবে আপু, মায়ের সাথে কোনভাবেই কোন রকমের বাজে ব্যবহার করবে না। নিজের রাগ অ’ভিমান ক্ষোভ নিজের মাঝেই চেপে রেখে মায়ের সাথে আগের চাইতেও বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ করো।

আস্তে আস্তে জানার চেষ্টা করো মায়ের বিয়ের কাহিনীর বিস্তারিত, জানার চেষ্টা করো যে কেন আর কী’ কারণে ছোট ভাই জন্মের পর থেকে তাঁরা আলাদা থাকেন। হয়তো এমন কিছু জানতে পারবে, যেটা তোমাকে নতুন করে ভাবাবে।

মা যেহেতু বাবার প্রতি সব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন, মাকেও আমি খা’রাপ মানুষ বলতে পারছি না। তাই আমা’র মনে হয় একদিন গল্পের ফাঁকে মাকে তুমি জানাও যে মায়ের পর’কী’য়া স’ম্পর্কের ব্যাপারটি তুমি জানো।

ভুলেও একজন কন্যার মত করে ব্যাপারটি উপস্থাপন করবে না। করবে একেবারেই একজন বান্ধবীর মত। যেন মা কোনভাবেই তোমা’র ওপরে রাগ করতে না পারেন বা তোমা’র সাথে মায়ের স’ম্পর্ক খা’রাপ না হয়ে যায়। সেটা হলে এই সংসার নষ্ট হতে সময় লাগবে না আর দেখা যাবে মা তোমাকে জীবন থেকে দূর করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।

মাকে জানাবে যে দুর্ঘ’টনা বশত তুমি সবকিছুই জেনে ও দেখে ফেলেছ। প্রথমে তোমা’র খুব রাগ হয়েছিল, এখনো হচ্ছে। কিন্তু মা যদি সেই প্রে’মিকের সাথে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন, তুমি বা তোমা’র ভাই বাঁ’ধা হয়ে দাঁড়াবে না।

বরং মাকে সুখী দেখে ভালো লাগবে তোমা’র। আর কেউ সাপোর্ট না দিলেও তোম’রা দেবে। মা যেন নিজের সুখ খুঁজে নেন, তোমাদের কারণে নিজেকে বন্দী না ভাবেন।

একটু ক’ষ্ট করে হলেও ঠিক এই কথাগুলোই বলবে আপু। কারণ মাকে যদি প্রথমেই জো’র করো যে সেই স’ম্পর্ক ভাঙতে হবে, তাহলে মায়ের আকর্ষণ ওই ভুল স’ম্পর্কের প্রতি আরও বেড়ে যাবে।

কাউকে যেটা বাঁ’ধা দেয়া হয়, আম’রা মানুষেরা সেটাই বেশি করে করি। তাই সেটা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত মাকেই নিতে দাও। মা হয়তো প্রথমে অস্বীকার করবেন সব।

তারপর বলবেন যে ওই স’ম্পর্কের পরিণতি সম্ভব না, প্রে’মিক তাঁকে বিয়ে করতে পারবে না ইত্যাদি। (কারণ এই ধরণের স’ম্পর্ক যেসব পুরুষ কএ, তাঁরা আসলে কেবল যৌ’নতার ব্যাপারেই আগ্রহী হয়)। তখন তুমি পাল্টা প্রশ্ন করবে- “মা, যে মানুষ তোমাকে বিয়ে করতে পারবে না, সে তোমাকে কেমন ভালোবাসে?”

মাকে আস্তে আস্তে বোঝাবে যে ওই প্রে’মিক কেবল মায়ের শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতিই আকৃষ্ট, মায়ের ক’ষ্টের প্রতি না। শরীর আকর্ষণীয় বলেই বাজে ছবির প্রয়োজন হয় ইত্যাদি বোঝাবে।

সাথে এও যে এই স’ম্পর্কের পরিণতি ক’ষ্ট ছাড়া কিছুই হবে না। উল্টো এসব জানাজানি হয়ে গেলে মা খুবই লজ্জায় পড়ে যাবেন। আর লোকটা যদি এইসব দিয়ে মাকে ব্ল্যাক মেইল করার চেষ্টা করে, তখন মা কী’ করবেন? ভাইয়ের কথা বাদই দাও, মায়ের এসব কথা সমাজে জানলে তোমা’রও কি ভালো বিয়ে হবে?

এসব বলে মায়ের মনের লাগামে টান দাও। মা যদি নিজের ভালোবাসা জীবনের দোহাই দেন, তখন তুমিও তোমা’র বাবা কী’ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন সেটা বুঝিয়ে বলবে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানর মত করে।

দাম্পত্য মা বাবার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, সেখানে সন্তানের কথা বলা ঠিক না। কিন্ত চেষ্টা করবে বাবাকে বেশি করে মায়ের দিকে ঠেলে দিতে। এবং মাকে বাবার ভালোবাসার সুন্দর দিকগুলো বেশি বেশি করে দেখাতে। এসব কিছুই একদিনে হবে না আপু।

খুব সাবধানে আস্তে আস্তে করতে হবে। তাই মন ও মা’থা ঠাণ্ডা রাখো। আমি জানি কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু নিজের পরিবার বাঁ’চানোর দায় এখন তোমা’র ঘাড়েই। মা তোমাকে যেমন ভালোবাসে বললে, আমা’র ধারণা মাকে বোঝাতে পারলে তিনি তোমা’র কাছে ধ’রা পড়ার লজ্জায় হলেও শুধরে যাবেন। (ছবিটি প্রতীকী’)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.