ঠিক যেমনভাবে সে’না কুকুরদের প্রশি’ক্ষণ দেওয়া হয়, লাদাখের কয়েকটি প্রজাতির কুকুরকে তেমনভাবেই প্রশি’ক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সী’মান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তারাও ভারতীয় সেনা’বাহিনীর শক্তি হয়েই কাজ করবে। প্রতিরক্ষা সূত্রে খবর, পূর্ব লাদাখের গ্রামগুলি থেকে বাখারওয়াল, তিব্বতি ম্যাস্টিফ প্রজাতির কুকুরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে।
বাখারওয়াল প্রজাতির কুকুর সাধারণত পীরপঞ্জল রেঞ্জেই পাওয়া যায়। পাহাড়ি বাখারওয়াল ও গুজ্জর সম্প্রদায়ের মানুষরা এই জাতীয় কুকুর পালন করেন। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাহারা দেওয়ার কাজে, শিকার ধরা বা অন্যান্য কাজে এই কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরা দুরন্ত শিকারি, ঘ্রাণ শক্তি খুবই বেশি। তার থেকেও বড় কথা পাহাড়ি খাঁজ বা উপত্যকাতেও তাদের গতি প্রশংসনীয়। এই প্রজাতির কুকুরকে অনেকসময়ই সেনা ছাউনি পাহারার কাজে লাগান জওয়ানরা।
বাখারওয়াল প্রজাতির কুকুর
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণে যেভাবে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে চিন, তাতে এক মুহূর্তের জন্য অসর্তকতাও বিপদ ডেকে আনতে পারে। কালা টপ, হেলমেট পাহাড়ের নীচে যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজিয়ে বসে গেছে তারা। চুসুল, মলডোর কাছেও লাল ফৌজের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শত্রু সেনার অবস্থান জানার জন্য পাহাড়ি কুকুরের দক্ষতাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাখারওয়াল প্রজাতির কুকুরা এত দ্রুত ট্রেনিং নিতে পারে যে সেনা অভিযানেও তাদের কাজে লাগানো যায়।
তিব্বতি ম্যাস্টিফ
এক সেনা আধিকারিক বলছেন, স্থানীয় বাখারওয়াল কুকুররা খুব ভাল গার্ড-ডগ হয়। সেনা ক্যাম্প পাহারা দেওয়া, রাতের বেলা শত্রু সেনার গতিবিধি আঁচ করলে তা জানান দেওয়া এমনকি প্রয়োজনে হামলাও করতে পারে তারা। তিব্বতি ম্যাস্টিফ বিশেষ করে ব্ল্যাক ম্যাস্টিফকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে সেনা অভিযানের কাজে লাগানো যায়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যাস্টিফ জাতীয় কুকুরকে সঠিক ট্রেনিং দিলে তারা নেকড়ের থেকেও বেশি আক্রমণাত্মক হতে পারে। তাছাড়া ঘন লোমে ঢাকা এই কুকুর পাহাড়ি এলাকার দুর্গম পরিবেশেও মানিয়ে নিতে পারে।
সেনাবাহিনীর আরও অনেক কাজেই লাগানো যেতে পারে পাহাড়ি কুকুরদের। সেনা আধিকারিকরা বলছেন, শীতের লাদাখে বরফের ধস নেমে অনেকসময়েই সেনা ছাউনি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বরফের মধ্যে চাপা পড়ে যান জওয়ানরা। সেই সময় উদ্ধারকাজে বিশেষ সাহায্য করে পাহাড়ি কুকুররা। বাখারওয়াল প্রজাতির কুকুরকে অ্যাভাল্যাঞ্চ রেসকিউ অপারেশন (ARO)-এর কাজে লাগানো যায়। ২০-৩০ ফুট গভীরে বরফের স্তরে দেহ চাপা পড়ে থাকলেও তার খোঁজ দিতে পারে এই কুকুররা। একইভাবে ল্যাব্রাডর ও জার্মান শেফার্ড প্রজাতির কুকুররাও লাদাখের চরম আবহাওয়ার পরিবেশেও মানিয়ে নিতে পারে। এরাও দুর্দান্ত শিকারি, ঘ্রাণ শক্তিও তারিফ করার মতো।
স্থানীয় লাদাখি কুকুরদের ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষম দিতে শুরু করেছে সেনাবাহিনীর আর্মি ডগ ইউনিট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাখারওয়াল, তিব্বতি ম্যাস্টিফ ছাড়াও, জার্মান শেফার্ড, বিমাচলি হাউন্ড, রাজাপালায়াম, কান্নি, চিপ্পিপারাই জাতীয় কুকুরদেরও ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। এই প্রজাতির কুকুরা খুব ভাল স্নিফার ডগও। পাহাড়ি খাঁজে কোথাও মাইন পোঁতা থাকলে তার সন্ধান দিতে পারবে এই কুকুররা।
সেনা আধিকারিকরা বলছেন, ক্যাম্প পাহারা, ইনফ্যান্ট্রি পেট্রলিং, লুকিয়ে রাখা মাইন ও বিস্ফোরকের খোঁজ দেওয়া, উদ্ধার কাজ ইত্যাদি বিভিন্ন অপারেশনে সেনা কুকুরদের দক্ষতা আগেও প্রমাণিত হয়েছে। লাদাখে লাল সেনার মুখোমুখি অবস্থানে এখন ভারতীয় কম্যান্ডোদের এই জাতীয় কুকুরদেরই প্রয়োজন।